গবেষণামূলক প্রবন্ধ প্রবন্ধ

ড. এস এ মুতাকাব্বির মাসুদের গবেষণা প্রবন্ধ- তারাশঙ্করের উপন্যাস: ব্রাত্যশ্রেণির নীরব বিপ্লব (পর্ব-৪)

তারাশঙ্করের উপন্যাস: ব্রাত্যশ্রেণির নীরব বিপ্লব (পর্ব-৪)
ড.এস এ মুতাকাব্বির মাসুদ


বস্তুত শরৎচন্দ্রের উপন্যাসে গ্রামীণ মানুষের যাপিত জীবনচিত্র যেমন অংকিত হয়েছে তেমনি ওঠে এসেছে পাড়াগাঁয়ের সাধারণ মানুষের আশা- আকাঙ্ক্ষার কোমল-রসোজ্জ্বল পরিচয়।এ ক্ষেত্রে সমাজের অবহেলিত ব্রাত্যশ্রেণির জীবন যাত্রার করুণ রহস্য প্রথম উদঘাটিত হয় তারাশঙ্করের গল্প ও উপন্যাসে।এ পরিবর্তনশীল যুগপরিক্রমায় বঙ্কিমযুগের সমস্যা ও তারাশঙ্কর যুগের সমস্যা বস্তুত এক নয়।ক্রমপরিবর্তনশীল সমাজে বঙ্কিম- শরৎ যুগের দ্বন্দ্ব- সমস্যারও আজ দৃশ্যমান পরিবর্তন এসেছে।তারাশঙ্কর ক্রমবিবর্তনশীল এ সামাজিক রূপান্তরের ইতিহাস সম্পর্কে অবহিত ছিলেন। প্রাক তারাশঙ্কর যুগে যে সকল সামাজিক সমস্যা সমকালে বিদ্যমান ছিলো তা সমকালীন সাহিত্যিকদের তীব্রভাবে আলোড়িত করেছিলো;তারাশঙ্কর যুগে সে সকল সমস্যা লুপ্ত প্রায়।
পরিবর্তে নতুন সমস্যার উদ্ভব লক্ষ করা যায়। এদেশের সমাজ বাস্তবতায় অধুনা কৃষি থেকে দ্রুত শিল্পায়নের প্রসারে দুই কালের দ্বন্দ্ব সমাজে বিদ্যমান অনগ্রসরতার চিত্রকে স্পষ্ট করে তুলেছিলো।শরৎযুগের সমকালীন সামন্ততন্ত্রের অপ্রতিরুদ্ধ দৌরাত্ম তারাশঙ্করযুগে নব্য শিল্পপতিদের সাথে নিত্য সংঘাতের ক্ষেত্র তৈরি হতে থাকায় সে ‘যুগ’ ক্রমবিলিয়মানতায় ম্লান ও ধূসর হয়ে ওঠে।এ ধারায় তারাশঙ্করের সমাজভাবনাও নতুন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে থাকে।
বস্তুত ধনতান্ত্রিক সমাজ ব্যবস্থায় পুরাতন সামন্ততান্ত্রিক জীবনকাঠামো যে ক্রমশ ভেঙ্গে পড়েছে
তারই কুশলী আলেখ্য- উপন্যাসে তিনি দক্ষতায় তুলে এনেছেন মেধাবী উপলব্ধি ও আধুনিক দৃষ্টিভঙ্গির মাধ্যমে। পাশাপাশি ক্রম পরিবর্তনশীল এ ক্ষয়িষ্ণু সমাজব্যবস্থায় জীবনের মূল্যবোধেরও যে ক্রমশ পরিবর্তন তাও এ বিচক্ষণ ঔপন্যাসিকের দৃষ্টি এড়াতে পারেনি। এতে বলা চলে একদিকে গ্রামীণ সাধারণ মানুষের বিপর্যয় যেমন লক্ষ করা যায় তেমনি সমাজ বাস্তবতায় সমকালীন বুর্জোয়া জমিদারদের জীবন-মানের পরিবর্তনেরর বিষয়টি দৃশ্যমান হয়ে ওঠে।উল্লেখ্য প্রাক ব্রিটিশামলে আমাদের পল্লীকেন্দ্রিক একান্নবর্তী পরিবার কৃষি নির্ভরতায় সামন্ততন্ত্রের ধীরগতিতে প্রবাহিত হচ্ছিলো! সমকালীন পল্লীশিল্পগুলোও ছিলো কৃষিভিত্তিক। ফলে আমাদের গ্রামীণ শিল্পব্যবস্থায় সামাজিক-অর্থনৈতিক কাঠামোটি ছিলো স্বয়ংসম্পূর্ণ কিন্তু পরবর্তীতে ইংরেজ বণিক শাসনে আমাদের গ্রামীণ অর্থনীতি অনিবার্য বিপর্যয়ের এক অনাকাঙ্ক্ষিত পরিণতির দিকে এগিয়ে যায়।তখন সমগ্র ভারতবর্ষ সদ্য বিপ্লবজাত ধনিক বিপ্লবের উত্তরাধিকার নিয়ে আবির্ভূত হয়।শুধুমাত্র তাঁদের বৃহৎ
পূঁজিপতির স্বার্থেই এদেশে তাঁরা গড়ে তোলে আধাসামন্ততান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা! তাঁদের এই অপকৌশলে এদেশীয় রাজা জমিদার ও মহাজনদের
এরূপ তথাকথিত শাসন ব্যবস্থায়-শোষণের যন্ত্রে পরিণত হতে দেখা যায়।সমাজব্যবস্থার ক্রমবিলিয়মানতায় অবশেষে শিল্পযুগ ভারতবর্ষের পল্লীসমাজকে ক্রমেই গ্রাস করে নিয়েছিলো।

——————–
১৫-০৪-২০১৮
“””'”””””””””””””””””””

Related Posts