রুমকি আনোয়ারের কবিতা
উদ্বাস্তু
বিশ্বাসের ভিটে-বাড়ি
থেকে বিশ্বাস উধাও হলে পরে
জন্ম নেয় উদ্বাস্তু- এক, দুই তিন হাজার অযুত
ক্ষেত্র বিশেষে কোটি ছাড়িয়ে যায়
হেসে চলে কিছু বিজাতীয় কুকুর তখন ”যাক ভেগেছে।”
শামসুর রাহমান লিখেছিলেন- ”সুধাংশু যাবে না”
আমিও বলি যাবে না হিমাংশু , অলোক কিংবা রেনুকা দি কেন যাবে তোমরা
শিকড় উপড়ে ফেলে কেন যাবে নিরুদ্দেশে
দণ্ডক অরণ্যে, আন্দামানে, মরিচঝাঁপিতে
ফিলিস্তিনি উদ্বাস্তুর মতো ঘোরা আশ্রয়ের খোঁজে
দেশহীন দেশ থেকে দেশে ।
সুধাংশু যাবে না কোথাও, হিমাংশুও না
শুভেন্দু গেলে সে যাক দূর হয়ে যাক ভিক্ষাপাত্র হাতে
আমাদের জীবনের গান জীবনানন্দের মত বহু কণ্ঠে হোক উচ্চারিত
এই বাংলায় আমরা সকলে মিলে রয়ে যাবো
হয়ত মানুষ নয়, ”শঙ্খচিল শালিকের বেশে”- নাড়ী ছেঁড়া টানে
মাটির গন্ধ শুঁকে বলি, মাটির শপথ খেয়ে বলি আমরা রয়ে যাবো
এই নদী এ আকাশ, এ পাহাড়, সবুজ বনানী, ব্যাকুল তুলসিমঞ্চ-
পিদিমের আলো, এই মাঠ এই গ্রাম, শাপলার হাসি ভালোবেসে।
যদিও বৃক্ষজ সবুজ নির্বাসিত হয়েছে কিছু
অহল্যা সময় খেয়েছে অনেক
পাতকীকাল বুঝি নিয়েছে পিপাসার পাত্র
তবুও পূর্ব পুরুষের রক্তের ঘ্রাণ খুঁজে নেই এখানেই
প্রেমহীন উপেক্ষার আয়োজন ছুড়ে ফেলে
মেঘহীন শ্রাবণে করি বাস তবু উদ্বাস্তু হবো না কখনো ।
আমাদের মেদহীন চওড়া হাতে আবার বুনবো আবাদিত জমিন
শুভেন্দুও ভাববে আবার এগুবে না এককদমও উদ্বাস্তু হওয়া বড় কঠিন ঠেকবে
কেবলই পিছাবে এ পোড়া মাটির টানে
হবে ফেরা গৌরবের -বিশ্বাসের দ্বিতীয় উত্থান
মূলে আঘাত নিয়েও বেঁচে থাকা আমরা অপরাজয়ের গান গেয়ে যাই ।
জানি ভালো করেই জানি-
ছিন্নমূল না হলে পরে কেউ বুঝে না মূলের ধর্ম
উদ্বাস্তু না হলে পরে কেউ বুঝে না মূলের মর্ম
উদ্বাস্তু না হলে পরে কেউ বুঝে না বাস্তুর ধর্ম
উৎসমুখ রুদ্ধ হলে পরে চলে উৎসের সন্ধান,
হনন খনন আয়োজন দেশ- দেশান্তর
এই দহন এই কালান্তরকে কবর দিলাম
ইতিহাসের শাশ্বত সত্য অস্বীকার করে, ভুল দিয়েও ভুল ভাঙ্গা যায় ।