শিকল
রওশন আরা মুনা
তোমাকে না দেখার জ্বরে পুড়ে গেছে আমার যাপিত চোখ।
হুটহাট তোমাকে দেখা হলুদ সন্ধ্যাগুলো মিইয়ে গেছে সেই কবে!
নিরুদ্বেগ দুপুরের সংসারী গল্পগুলো এখন বড্ড অনাথ।
এই লকডাউন, কোয়ারেন্টেইন শব্দগুলো ভেঙে গুড়িয়ে দিয়েছে আমাদের পূর্বসজ্জিত বাসর।
শুনেছি আজকালের আকাশ ছেয়ে গেছে মচমচে রঙিন ঘুড়িতে,
পাখিরা মেলেছে স্বাধীন পালক।
ওদের ইচ্ছের স্বাধীনতা যতটা স্বৈরাচারী
ততটা স্বাধীন নয় আমাদের ইচ্ছেরা।
ইচ্ছের পায়ে বাঁধা অদৃশ্য শিকল,
যে শিকলের ঝনঝন শব্দ শুনে চলেছি দিনরাত।
অদৃশ্য সে শিকলের শৃঙ্খলে পিষ্ট আমাদের হৃদয়িক স্বাধীনতা।
আমাদের গল্পের নদীতে ভাসে না আর কোন পালতোলা নৌকা।
আমাদের জিহ্বা ছোঁয় না রেঁস্তোরা।
আমাদের বহন করে না আর কোনো বাহন।
আমাদের অপেক্ষার নাভিতে জমেছে যন্ত্রণার পুরু মেদ।
আমরা এখন একে অপরের নিঃশ্বাসের বদলে হয়েছি আতঙ্ক,
ঠোঁটের বদলে ছুঁয়েছি মাস্ক
হাতের বদলে ধরেছি গ্লাভস।
আমরা কেউ কারো নই
যেমন শেষ দিবসে থাকবো না কেউ কারো।
আমাদের এসব যৌবনের মৌবনে এসেছিলো যে নয়া ফাল্গুন,
তার সবকটি ফুল ঝরে গেছে অদৃশ্য বিষে।
আমাদের মেঘ নরম স্বপ্ন ছুঁয়েছে কবর
আমাদের তপ্ত কথার পিঠে গলে পড়েছে উত্তর মেরুর বরফ।
আমাদের পাঁচমিশালি প্রেমগুলোতে এপিটাফ বসিয়ে পালিয়ে গেছে ঘাতক সময়।
তবুও সে সময়ের পথে চেয়ে আমরা কাটিয়ে দিচ্ছি আরো কয়েকশো বর্তমান।
যে বর্তমান মরে গেলেই হুড়মুড় করে সুখ ফিরবে বাড়ি, সুখ ফেরাবে হৃদয়।
অপেক্ষার চাতক হৃদয় ভিজে যাবে অথই প্রেমধারায়।