ছোটগল্প

কিরণ আহমেদের গল্প- ড্রফট রাইটার

ড্রাফট রাইটার
কিরণ আহমেদ


হ্যাঁ! ভুল নয়। সেদিন দেখেছিলাম। মনে হয় এইতো সেদিন। অথচ কয়েক বছর হয়ে গেছে! একটি ছবি। ছবির চরিত্রটি যেন আবহমান কাল ধরে সবুজ ভূমিতে স্বপ্ন চাষ করে চলেছে। আমি শুধু তোমার পেছন দিকটি দেখেছিলাম। কিন্তু খুব সাদামাটা অথচ কী নিখাদ সুন্দর ছিলো, যার প্রকৃত ভাষারূপ দেওয়া আমার সাধ্যাতীত। না, তোমার মুখটা আমি দেখিনি কারণ মুখটা তখন অস্তরাগের অনুরাগে পুলকিত হয়ে সূর্যকে প্রেমের মন্ত্র শেখাচ্ছিলো! হয়তো কারো জন্যে অপেক্ষা করছিলে। হয়তোবা না! কিন্তু সেদিকে আমার কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। সেই থেকে শুরু হলো পথ চলা। আমি আমার অসম্ভব ভালোলাগাটার ব্যাখ্যা আজও খুঁজে পাইনি। কিন্তু এ নিশ্চয়তা আমার মন থেকে পেয়েছি যে, এ ভালোলাগায় কোনোরূপ কাম ছিলো না, মোহ ছিলো না, লালসা ছিলো না, হ্যাঁ বুভুক্ষু মনের নিখাদ-সফেদ চাওয়া মেটাবার এক ধরণের তাড়না ছিলো- আর সেটা শতভাগ বিশুদ্ধ ছিলো সে নিশ্চয়তা আমি তোমাকে দিতে পারি। আমি আমার সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সবসময় সচেতন ছিলাম। তাই কখনো কোনো বিষয়ে তোমাকে জোর করিনি। কিন্তু আমার মনতো শৃঙ্খলিত নয়। অবচেতনে কখন যে ফুড়ুৎ করে উড়ে যেতো তোমার আকাশের শাদা মেঘে ভেসে বেড়াতে, অথবা ডুব সাঁতারে নিজেকে সজীবতার স্বাদ দিতে তা টেরই পাইনি। মনোবিদগণ হয়তো বিষয়টিকে প্রেম, ভালোবাসা, আবেগ, কাম, ইত্যাদি নানান বিশ্লেষণে রূপদানের চেষ্টা করবেন। সে তাদের বিষয়। আমি তার ব্যাখ্যা দিতে যাবো না। ওই কঠিন কর্মটি আমার নয়, আমার কাছে তা অতোটা গুরুত্বপূর্ণও নয়।

এ তো গেল আমার কথা। তুমি ছিলে তখন কিশোরী বালিকার মতো। সবকিছুতেই অবাধ-উচ্ছ্বাসের বহিঃপ্রকাশের প্রচেষ্টা ছিলো, কিন্তু ভিতু হরিণীর মতো কথা বলা, ইতস্তত আচরণ সবকিছু মিলে কিছুটা ভিতু, কিছুটা লাজুক অথচ অনেকটা রহস্যময়ী । কবিতা, গল্প লিখে যেতে দ্বিধাহীন, ছন্দ-লয়-তাল বিক্ষিপ্ত। যা ভালো লাগতো তাই লিখতে। কবিতা ছিলো তখনও তোমার কাছে খেলনার মতো। আর আমার কাছে ছুটে আসতে যেন ”ছোট্ট শিশুটি ভাঙা খেলনা জোড়া দেওয়ার জন্য ছুটে এসেছে”। আর আমি তোমার ভাঙা খেলনাগুলো একের পর এক পরম যত্নে জোড়া দিয়ে যেতে লাগলাম আমার সাধ্যানুযায়ী। একসময় দেখলাম অনেকেই তোমার খেলনা জোড়া দেওয়ার জন্য সারি বেঁধে দাঁড়িয়ে আছে। আর তুমিও কষ্টিপাথরে যাচাই করছো কে কতো ভালো জোড়া দিতে পারে। হীরা-জহরত চিনতে হলে তো পাকা জহুরি হওয়া চাই, তাই না?

তখনই বুঝে নিয়েছি আমার ছুটির সময় হয়েছে। আমার চলার পথটি কখনো অতোটা মসৃণ ছিলো না, জানি। কিন্তু তুমি কী অবলীলায় তরতর করে চাঁদ ছুঁতে চলেছো। বিশ্বাস করো আমি মনে-প্রাণে চাই তুমি চাঁদ ছোঁও। হয়তো ইতোমধ্যে আমার প্রতি তোমার এক ধরণের তাচ্ছিল্য জন্মেছে। তা জন্মাতেই পারে। কারো উপর জোর খাটানোর প্রবণতা আমার আগেও ছিলো না, এখনও নেই। কারণ যে জগতে নিয়ন্ত্রণের প্রয়োজন হয় না সে জগতের উদাস হাওয়ার সাথে আমার বহুদিনের সখ্যতা। বলতে পারো অন্তরাত্মার যোগ।

তুমি হয়তো জেনে থাকবে আমি প্রয়োজনে নিজেকে কতটা গুটিয়ে নিয়ে পারি। তাই বিস্তরণের অভিপ্রায়ে কবি হয়ে উঠতে পারিনি, ড্রাফট রাইটারই রয়ে গেলাম।

 

Related Posts