প্রাপ্তি
নুরজাহান খাতুন
জীবনে সব কিছু হারিয়েও অনেকে অনেক কিছু পেয়ে যায় । আবার অনেকে সব কিছু পেয়েও কিছুই পায় না ।হাত শূণ্যই থেকে যায়।প্রাপ্তি -অপ্রাপ্তির দোলাচলে আমাদের সারাটা জীবন দোদুল্যমান । আমরা আমাদের জীবনের দেনা-পাওনার সাথে অবিরত সংগ্রাম করতে করতে এগিয়ে চলি ।জীবনের হিসেব বড়োই জটিল । জীবনের অঙ্কে লাভ-ক্ষতির হিসেব মেলানো বড়োই কঠিন । বিদিশা বসে বসে এলোমেলো চিন্তা করছিল। মন ভালো নেই । খবরের কাগজে একটা খবর পড়ে অবাক হয়ে যায় । অতীতের স্মৃতিগুলো চোখের সামনে মূহূর্তে ভেসে ওঠে ।হারিয়ে যায় অতীতে । অতীতের তিক্ত , অন্ধকারে ! বিদিশার বর্তমানটা ঝলমলে সুন্দর হলেও অতীতে কিন্তু সে মারাত্মক ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে ।আজ ভাবতে গেলেও গায়ে কাঁটা দেয়। বিদিশা সে অতীতকে স্মরণ করতে চাই না । কিন্তু আজ অতীতটা বার বার চোখের সামনে ভেসে উঠছে। বিদিশার বিয়ে হয়েছিল সম্বন্ধ করে ।বেশ ভালো পাত্র।বাবা খোঁজ খবর নিয়েছিলেন ।সৌভিক বিদেশে কাজ করে । কলকাতায় বাড়ি । রোজগার ভালো ।তবে কি কাজ জানতে চাইলে বলেছিল এক্সপোর্ট আর ইমপোর্টের কাজ। বিদিশা বাবার মতে রাজি হয়।বিয়ে হয়ে যায় বিদিশার। বিদিশার শশুরবাড়িটা কেমন যেন ! ঠিক বুঝে উঠতে পারে না।পাশের একটা দোতলা বাড়িতে রোজ রাতে পার্টি হয়। অনেক মহিলা আসে।কেউ অল্প বয়সী আবার কেউ তরুণী ।পোশাক -পরিচ্ছেদ কেমন অগোছালো ।বিদিশা একবার জিজ্ঞেস করে। শাশুড়ি বলেন ,ও সব ব্যাবসা সংক্রান্ত মিটিং করতে আসে ।তোমাকে ওসব ভাবতে হবে না । পরদিন বিদিশাকে সেজেগুজে কয়েকজন লোকের কাছে হাজির হতে বলা হয় । বিদিশা চুপচাপ থাকে । কিন্তু সন্দেহ বাড়তে থাকে ।রাতে হঠাৎ ঘুম ভেঙ্গে যায় । শাশুড়ি আর স্বামী গল্প করছে । বাজারে বিদিশার বেশ ভালো দাম পাওয়া যাবে । সৌভিকের মুখে এ কথা শুনে বিদিশার পায়ের তলার মাটি সরে যায়। নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারে না । নিজেকে কোনোরকমে সামলে নেয় । ঠিক করে নেয় আজকে রাতেই তাকে এখান থেকে পালাতে হবে ।সৌভিক নারী পাচারের ব্যবসা করে ! বিদিশা গভীর রাতে কলকাতার রাস্তায় বেরিয়ে পড়ে । ছুটতে থাকে । খালি পায়ে ছুটে চলে । সারা রাত ছুটতে থাকে । ভোরবেলায় হাওড়া স্টেশনে এসে পৌঁছায় । কিছু টাকা ছিল হাতে । টিকিট কেটে সোজা ট্রেনে ওঠে । আসানসোলে বাপের বাড়িতে পৌঁছায়। পুলিশে জানায়। ততদিনে সৌভিকরা দলবলে গা ঢাকা দেয় । বিদিশা একেবারে ভেঙ্গে পড়ে । বিদিশার হাত ধরে অমল ।তাকে ঐ পরিস্থিতি থেকে বের করে নিয়ে আসে । আজ সে অমলের জীবনসঙ্গিনী । কিন্তু অতীতের সে ভয়ঙ্কর কালো রাতটার কথা সে ভুলতে পারে নি ।আজও শিউরে উঠে ।আজ দু’ বছর পর সৌভিক সদলবলে ধরা পড়েছে ।সৌভিকের ছবি সমেত খবর দিয়েছে কাগজে। তাই দেখেই চিনতে পারে ।নারী পাচারের চক্রের অন্যতম পান্ডা সৌভিক রায় গ্রেফতার ! সেদিন সে রাতে বিদিশার মনে হয়েছিল সে সব হারিয়ে দিয়েছে ! তার জীবনে আর কিছু অবশিষ্ট নেই ! কিন্তু অমলকে স্বামী হিসেবে পেয়ে সে ধন্য হয়েছে ।সে জীবনে সব পেয়েছে ।অমল তার অতীত নিয়ে কখনো কোন প্রশ্ন করেনি ।যদিও বিদিশা তার তিক্ত অতীতটা গোপন করে নি । অমল তাকে সত্যিকারের ভালোবাসে ।অমল বিদিশার জীবনের চরম প্রাপ্তি !
রচনাস্থান -রঘুনাথপুর ,পুরুলিয়া
রচনাকাল -১০/৫/১৮