ভ্রমণ কাহিনী

মোহাম্মদ জাহিদ হোসেনের ভ্রমণ কাহিনী- থাইল্যান্ড ভ্রমণের অপূর্ব অভিজ্ঞতা

থাইল্যান্ড ভ্রমণের অপূর্ব অভিজ্ঞতা
মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন


(শেষ খন্ড)

এরপর রাত্রে আমরা নাইট ক্রজে ২ ঘন্টা ঘুরলাম। পুরো ব্যাংকক সিটিটা দেখলাম রাতের আলোয়। চাও ফারায়া নদীর উপর দিয়ে এই নাইট ক্রজটা চলল। আমাদের ডিলিসিয়াস ডিনার দেওয়া হল। রাত্রির আলোতে গগণচুম্বী বড় বড় অট্টালিকা, নদীর উপর আলো সব মিলিয়ে এক মায়াবী রহস্যময়ী হয়ে উঠেছিল এই ব্যংকক শহর। তবে এই নাইট ক্রুজ ট্যুর খুব কস্টলি। ৪জনের জন্য ২৮০০ বাথ। তবে এক বিচিত্র সুন্দর অভিজ্ঞতা হল ।

আমাদের থাইল্যান্ড বেড়ানোর শেষ দিন এসে গেলো। মনটা তাই খুব খারাপ হয়ে গেল। সকালবেলা আমরা ব্রেকফাস্ট সেরে গাড়ি নিয়ে বেরিয় পরলাম। প্রথমেই গেলাম ব্যাংকক এর বিখ্যাত গোল্ডেন বুদ্ধ মনেস্ট্রিতে। অপূর্ব দৃশ্য বিশাল বুদ্ধ মন্দির। এখানে ভগবান বুদ্ধ সোনার তৈরী কিন্তু কোনও সিকিউরিটি চেক বা ক্যামেরাতে ফটো তোলার কোন বাধাবন্ধকতা নেই। এই দেশ ট্যুরিস্টদেরও বিশ্বাস করে। তাই দেশটা সবদিক থেকে এত এডভান্স। ভগবান বুদ্ধ সিংহাসন আলো করে বসে আছেন। এখানেও টিকিট কিনে ঢুকতে হল। মন্দিরের সঙ্গে ছিল বিশাল মিউজিয়াম, তাও দেখলাম।

এরপর চললাম দেশের বর্তমান রাজা রামা ১০ এর বিশাল রাজপ্রাসাদের দিকে। বিশাল জায়গা নিয়ে, সাদা রঙয়ের বিরাট রাজপ্রাসাদ। চারিদিকে উঁচু প্রাচীর দেওয়া। পূর্বতম রামা রাজারাও এখানেই থাকতেন। রাজা রামা ১০ ও এখানেই থাকেন। কিন্তু আবার আশ্চর্য হলাম কোনও সিকিউরিটি চেক নেই। নেই কোনও মেটাল ডিটেক্টর নেই কোনও বাধা নিষেধ। আমরা যেখানে অভ্যস্থ সংসদ ভবন, রাষ্ট্রপতি ভবন, গণ ভবনে ঢোকার তো কোনও অনুমতি নেই উপরন্তু সেইসব জায়গার চৌহদ্দির মধ্যেও ঢোকার অনুমতি পায় না সাধারণ মানুষ। কিন্তু এই দেশে সবই উল্টো। রাজা প্রজাদের সঙ্গে, তাদের সঙ্গে মিশেই যেন দেশ শাসন করেন। আমরা সব ঘুরে দেখে নিলাম, এরপর বাকি রইল শপিং এর পালা। আমাদের ড্রাইভার ভাই আমাদের মার্কেটে নিয়ে গেল। এটা 4th Storied বিশাল মার্কেট। তবে এখানে জিনিসের দাম খুব সস্তা। শেষে আর একটা কথা বলি থাইল্যান্ডে ফল নানা রকমের পাওয়া যায়। দামও খুব কম। বিশেষ করে electronics goods. এছাড়াও জামাকাপড়, গিফ্ট দেওয়ার মত টুকটাক জিনিস কিনে নিলাম। হাতে সময় খুব কম। ৭টার মধ্যে এয়ারপোর্টে পৌঁছতে হবে। তাড়াতাড়ি হোটেলে পৌঁছে দেখলাম গাড়ি ওয়েট করছে এয়ারপোর্ট ড্রপিংয়ের জন্য। এদের সবকিছুই বিফোর টাইম। হোটেল থেকে লাগেজ নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম। দেখলাম ২দিন ধরে যার ট্যাক্সি নিয়ে ঘরছি সেই থাই ছেলে ড্রাইভারটিই দাঁড়িয়ে আছে। খুব সরল, সাধাসিধে ছেলে। আমরা তাকে বাই জানিয়ে গাড়িতে উঠে পরলাম। আর খুব মন খারাপ লাগছিল সব কিছুর জন্য। এই দেশের মানুষ, প্রকৃতি, পাহাড়, সমুদ্র, পশু-পাখি, আতিথেয়তা সবকিছুই মনের মণিকোঠায় চিরকাল গাঁথা হয়ে থাকবে।ট্যুরটি হয়তো একটু কস্টলি ৪ জনের জন্য ৩ লাখ টাকা খরচ হল। কিন্তু তার পরিবর্তে যা পেলাম তার মূল্য টাকায় মাপা যায় না। এর প্রতিটি মুহূর্তের প্রতিটি ঘটনা হয়ে থাকবে আগামী জীবনের চলার পাথেয়।

 

Related Posts