স্মৃতিকথা

সালামা জামানের স্মৃতিকথা- আমার বাবা

আমার বাবা
সালমা জামান


খুব বেশি মনে পড়ে বাবা তোমায়। যেদিন আমি ছিলাম খুব ছোট তুমি প্রথমে আমাকে হাতেখড়ি শিখিয়ে ছিলে। মাও কম করেনি। জানো বাবা আমি তোমার কথা ভাবতেই গর্ববোধ করি কারণ তুমি ছিলে স্কুল মাস্টার। বাবা, মানুষ তোমাকে শ্রদ্ধা করতেন আর আমি তোমার মেয়ে বলে স্নেহ করে। আমি গর্বিত তোমার মেয়ে বলে।

বাবা আজ কতো বড় হয়েছি, জানো তুমি আজ আমার সংসার হয়েছে। ছেলে,মেয়ে, স্বামী সব পেয়েছি। তোমায় দোয়ায় আল্লাহ্‌র রহমতে আমি আজ কতো সুখী। তোমার কতো স্মৃতি মনে পড়ে। আমি তোমার গল্প আমার ছেলে,মেয়েকে শুনাই। মনে পড়ে কতো বার যে তোমার সাথে বাজার গিয়েছিলাম। আমি বাজারে যাওয়ার জন্য পাগলামি করতাম তুমি নিতে চাইতেনা,আমি তখন চুপি চুপি তোমার আগেই রাস্তায় গিয়ে দাড়িয়ে থাকতাম আর তুৃমি দেখে বলতে, “তোকে নিয়ে আর পারিনা”।কত-শত বার যে তোমার সাথে বাজারে গিয়েছি হিসেব নেই। বাজারে গিয়ে কত কি কিনে দিতে মোয়া,মুরলী, চানাচুর,শনপাপরি,চকলেট আরও কত কি! এক এক দিন একটা।

বাবা তোমার একদিনকার স্মৃতিকথা খুব মনে পড়ছে। আমি আর আমার বড় বোন নারিকেল গাছের নিচে বসে খেলছিলাম, ঠিক তখনি তোমাকে আসতে দেখে বড় বোন বললো, “বাবা এসে কি বলবে জানিস?”আমি বললাম,”কি আর কইবো লেখা পড়া নাই! সময়ের মূল্য দিস।” বাবা কাছে এসে ঠিক তাই বললো। তখনি আমরা দু-বোন হেসে ফেললাম। তখন বুঝিনি সময়ের মূল্য কি। আজ বুঝতে পারছি সময় বড়ই মূল্যবান বাবা।

বাবা তোমার আরও একটি স্মৃতি মনে পড়ে। সেদিন ছিলো সন্ধ্যা বেলা ঠিক মাগরিবের নামাজের সময়, মা অজু করে ঘরে ঢুকলো আর পাশের বাড়ির লোক এসে বললো “দাদা!ও দাদা! তাড়াতাড়ি এসে দেখে যান একজন আপনার ক্ষেতের ধান দাড়িয়ে থেকে গরুকে দিয়ে খাওয়াচ্ছে!”মা বললো,”আমি যাই দেখি।” বাবা তুমি তখন রেগে গিয়ে বললে,”খবরদার এক পা এগোবেনা! নামাজ পড়ো। ওর ইচ্ছে করছে তাই ও করছে,ওকি জানে যে ও একদিক দিয়ে ধান খাওয়াচ্ছে আর আল্লাহ্‌ আর এক দিক দিয়ে আমায় দিয়ে দিচ্ছে।” তখন বুঝিনি তোমার কথার অর্থ বাবা। আজ বুঝতে পারছি কেউ কাউকে ঠকালে সে নিজেই ঠকে। আল্লাহ্‌র প্রতি কত বড় বিশ্বাস ছিলো তোমার বাবা।

বাবা তোমার কথা কেমন করে ভুলিবো বলো? তুমি যে আমার আত্মার সাথে মিশে আছো। একদিন আমার বড় বোন বলেছিলো,” বাবা আমাকে বিয়ে দিলেন কিছুই তো দিলেন না।” তখন বাবা বলেছিলো” কি বলিস কিছু দেইনি! এমন ছেলের কাছে দিয়েছি এখানেই তো একশ কানি সম্পদ।” আমার বড় বোন হাসলো বাবা কি বলে! আজ বুঝতে পারছি সেদিন কি বুঝালে। কারন আজ আমার বড় বোনের স্বামী বর্তমানে ঢাকা সিটি কলেজের ভাইস প্রিন্সিপাল। এর থেকে বড় সম্পদ আর কি হতে পারে বাবা। টাকা পয়সার থেকে বড় সম্পদ হলো ‘শিক্ষা’।

বাবা তুমি বলেছিলে কখনও কারো ক্ষতি করবেনা, পারলে উপকার করো,তাই করার চেষ্টা করি। তবে হ্যা ভুল করি, মাঝে মাঝে এক-দুবার ঠিক তখনি তোমার কথা মনে পড়ে।তখনি তুমি যেন ছাঁয়া হয়ে এসে বলো,’ ভুল করেছো? শুধরে নাও।’ তখনি ঠিক হয়ে যাই। বাবা তুমি বলেছিলে,” ধনী-গরীব সব ধরনের মানুষের সাথে মিশতে। যদি সে চোর হয় তাহলেও মিশতে,ভালো মানুষের সাথে বন্ধুত্ব হলে একজন চোরও ভালো হয়। আবার ভালো মানুষও খারাপ মানুষের সাথে মিশে খারাপ হয়।তবে এখানে ভালো মানুষের ভূমিকাটা বেশি, সে ঠিক মতো বুদ্ধি বা জ্ঞান খাটালে কেউ খারাপ হয়না। কাজেই মিশতে হবে,কারণ মানুষ মানুষের জন্য। পাপকে ঘৃনা করো, পাপীকে নয়।

বাবা কেনো তুমি চলে গেলে পরোপারে? তোমার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আজ আমার চোখের পানি ধরে রাখতে পারছিনা। বুকের ভিতরটা ফেঁটে যাচ্ছে। বাবা আর একটি বার আসোনা ফিরে। বাবা আজ আামার তোমাকে বড্ড দেখতে ইচ্ছে করছে। দুচোখ ভরে দেখবো তোমায়। বাবা তোমার আদর নিতে মন চায়, যেমনি করে আগে মাথায় হাত বুলিয়ে দোয়া করতে ঠিক তেমনি করে। বাবা ফিরে এসো আর একটি বার! বাবা!ও বাবা! বলতে পারো বাবারা কেনো হারিয়ে যায়? সব মেয়েদের মনে কষ্ট দিয়ে কেন হারায়? বলোনা বাবা?

 

তারিখ:-০৭/০৩/২০১৮

Related Posts