থাইল্যান্ড ভ্রমণের অপূর্ব অভিজ্ঞতা
মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন
পঞ্চম খণ্ড
থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংকক। আমরা ব্যাংকক এর বিশাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্টে পৌঁছলাম প্রায় ওখানের সময় ১১টার সময়। ফ্লাইটেও ব্রেকফাস্ট সার্ভ করা হয়েছিল। তারপর এসি ভ্যান আমাদের নিয়ে চলল হোটেলে। হোটেল City Chic এটি সুবর্ণভূমি রোডে। গাড়ি চলল আর আমরা রাস্তার দুপাশের Multistoried আকাশচুম্বী অট্টালিকা দেখতে দেখতে চললাম। পুরো শহরটা দু-তিন তলা ফ্লাইওভার দিয়ে ঘেরা। আমাদের গাড়িটাও ফ্লাইওভারের উপর দিয়ে চলল। আমরা হোটেলে পৌঁছলাম, বিরাট 3star হোটেল। আমাদের রুম এই হোটেলের ফিফথ ফ্লোরে ছিল। বিরাট রুম। রুম না বলে স্যুইট বলাই উচিত। রুমে কি নেই? ২টো বিশাল বেড, স্টাডি টেবিল, ডাইনিং টেবিল, মিনিবার উইথ ফ্রিজ। তারসাথে রয়েছে বিশাল বাথরুমও উইথ বাথটব। হোটেলের রুফটপে সুইমিং পুলও আছে। যাইহোক রুমে একটু রেস্ট নিয়ে আমরা বেরলাম। এখানে আমরা যেমন অটো বা টোটো করে ঘুরি, ওখানেও সেরকম টুকটুক এ করে কাছাকাছি ঘুরলাম। চারিদিকে বিশাল বিশাল হোটেল, বিশাল সপিং মল। হোটেলে City Chic কম্প্লিমেন্টারি ডিনার করলাম ইন্ডিয়ান রেস্তোরাঁতে। এখানে খাবারও খুব কস্টলি।
পরের দিন সকালে ব্রেকফাস্ট সেরে আমরা এসি ট্যাক্সি নিলাম বেড়ানের জন্য। এখানে সবই ট্যাক্সি এসি, লাল রঙ এর। আর রিফিউসালের কোন ব্যাপার নেই। প্রথমেই আমরা গেলাম বিখ্যাত ফ্লোটিং মার্কেটে। এই মার্কেটে ২ ঘন্টা ঘোরার জন্য ৩০০০ বাথ লাগল। পুরো মার্কেটটাই পানির উপর। দুদিকে নারকেল গাছ সহ নানান রকমের ফুলের সম্ভার। তার মাঝখান দিয়ে আমরা চললাম। এখানেও সব সুন্দরী থাই মেয়েরা দোকানদার। কোন জিনিস পছন্দ হলে ওরাই নৌকটিকে ছাতার বাটের মত একটা জিনিসদিয়ে থামাচ্ছে। প্রথমেই আমরা গ্রীন কোকোনাট আইসস্ক্রীম খেলাম। ডাবের ভেতরের পানিটাকে বরফ করা হয়েছে। ভেতরে শাঁস সমেত আইসস্ক্রীম। দারুন টেস্টি। যাইহোক টুকটাক জিনিস কিনতে কিনতে আর দুপাশের দৃশ্য দেখতে দেখতে আমরা এগিয়ে চললাম। খুব গভীর পানির উপর দিয়ে আমাদের নৌক চলছিল। পানিতে অনেক কুমির ছানা, ছোট বড় নানা রকমের সাপ ও নাম না জানা নানান রকমের ফুল দেখতে দেখতে আমরা এগিয়ে গেলাম। দারুণ অনুভূতি, মন ভরে গেল। অদ্ভূত একটা থ্রিলিং ফিল করলাম এই ফ্লোটিং মার্কেটের জার্নিতে। ২ঘন্টা পর আমাদের ফ্লোটিং মার্কেট দেখা শেষ হল। আমরা পারে উঠেই দেখলাম থাই ফটোগ্রাফার ওদের ক্যামেরা দিয়ে আমাদের চারজনের ল্যামিনেট করা ছবি হাতে তুলে দিল ৪০০ বাথ এর পরিবর্তে। ট্যুরিজম বিজনেস টা কি করে পজেটিভ ওয়েতে চালাতে হয় এটা একটা শিক্ষনীয় বিষয়।
এরপর আমরা গেলাম ওটাফো মনেস্ট্রি বুদ্ধ টেম্পলে। এটি লর্ড বুদ্ধর মন্দির। এখানে থাইল্যান্ডের যে রাজারা রাজত্ব করেছিলেন বা এখনও যাঁরা রাজত্ব করছেন তাঁদের সময়সূচী সহ বংশপরিচয় দেওয়া রয়েছে। কিং রামা ১ থেকে কিং রামা ৯ এর আগে রাজত্ব করেছিলেন। বর্তমানে কিং রামা ১০ রাজত্ব করছেন। এখানে টিকিটের মূল্য ৪০০ বাথ। এখানে ঢোকার মুখে খুব সুন্দর ফোয়ারা। ফোয়ারায় স্বচ্ছ পানিতে বিরাট বিরাট রঙিন মাছ খেলা করছে। দেখে মন ভরে গেল। অনেকটা সিড়ি দিয়ে উপরে উঠে বুদ্ধদেবের মেইন টেম্পেল। বিশাল এরিয়া নিয়ে এই ওটাফো মনেস্ট্রি। মেইন টেম্পেলে গিয়ে দেখলাম শায়িত বুদ্ধদেবের সোনার মূর্তি। প্রায় ১০০ ফিট লম্বা। আমরা ঢুকে মুগ্ধ হয়ে গেলাম । এরকম শায়িত বুদ্ধদেবের মূর্তি আগে দেখিনি।
তারপর আমরা হালকা লাঞ্চ সেরে নিয়ে চললাম জিম থমসম মিউজিয়ামে। এখানেও ৪ জনের জন্য ৪০০ বাথ টিকিট কাটতে হল। এই মিউজিয়ামে রয়েছে বুদ্ধদেবের ব্যবহৃত ও তাঁর সাধনার এবং তাঁর কাছের শিষ্যদের সাধনার কিছু জিনিসপত্র। এখানে গাইড ছিল একজন থাই লেডি। আমাদের হাতে সময় ছিল তাই আমরা মিউজিয়ামেরই ভিতের একটা রেস্তোরাঁতে কেক আর একটু স্নেক্স খেয়ে নিলাম। খাওয়া-দাওয়া সেরে ঠিক ৬টার সময় মিউজিয়ামে ঢুকলাম। কাঠের সব আসবাবপত্র, পাথরের জিনিস, বুদ্ধদেবের ব্যবহৃত বিছানা, খাট, বইপত্র সব দেখলাম। একধরণের পাথরে খোদাই করা অনেক মূর্তি ও sand stone এর অপূর্ব সব statue দেখলাম। গাইড আমাদের সব বুঝিয়ে দিচ্ছিল। আমরা মিউজিয়ামের বাইরেও ছবি তুলেছি। তবে ভেতরে ক্যামেরা বা মোবাইল নিষেধ ছিল। (চলবে…)