বহির্বিশ্ব ভ্রমণ ভ্রমণ কাহিনী

মোহাম্মদ জাহিদ হোসেনের কবিতা- থাইল্যান্ড ভ্রমণের অপূর্ব অভিজ্ঞতা

থাইল্যান্ড ভ্রমণের অপূর্ব অভিজ্ঞতা
মোহাম্মদ জাহিদ হোসেন


তৃতীয় খন্ড

ফিফি আইল্যান্ড

ফুকেতের অন্তর্গত অন্যতম আর একটি আইল্যান্ড। পরের দিন সকাল ৭টায় আমাদের হোটেল থেকে জেটি তে নিয়ে যাওয়ার জন্য হোটেলে গাড়ী এল। প্রায় ৮টার সময় আমরা জেটি তে পৌঁছলাম। জেটি তে পৌঁছেই আমরা দেখলাম বিরাট একটা ক্রুজ দাঁড়িয়ে আছে। এরপর আমাদের হাতে সবুজ রঙের স্টিকার লাগিয়ে দেওয়া হল। অন্যান্য হোটেল বা অন্যান্য কোম্পানী অন্য রঙে স্টিকার ব্যবহার করছে। বিশাল এই ক্রুজ এর ভিতরটা পুরোটাই এসি আর ছাদে বা কেবিনের বাইরে সমুদ্রের উদ্দাম হাওয়া। এরমধ্যেই আমাদের স্ন্যাক্সের সঙ্গে কফি সার্ভ করা হল। আর আমরা কখনও কখনও ক্রুজের ভেতরে বিশাল জায়েন্ট স্ক্রীনে সিনেমা চলছে তাতে আবার কখনও ডেকের উপর দাঁড়িয়ে নীল সমুদ্রের বিশাল বিশাল সব ঢেউয়ের আনাগোনা, উচ্ছলতা, দূরে ছোট বড় পাহাড় দেখতে দেখতে চক্ষু সার্থক করছিলাম। এ এক অপূর্ব অভিজ্ঞতা।

ডেকের উপর থেকে নিচে সমুদ্রের জলে বড় বড় নানা রঙের সি ফিস্ দেখলাম। সময়ে সময়ে মনে হচ্ছিল কৃত্তিম ঠান্ডা ঘরে মানে এসিতে থাকার চেয়ে দিগন্ত বিস্তৃত এই নীল জলরাশির হাতছানি অনেক বেশী মনোরম। অবশেষে আমরা ফিফি আইল্যান্ড এর মাংকি বিচে পৌঁছলাম। অপূর্ব দৃশ্য। এখানে ক্রজের থেকে সবাই সমুদ্রে নামার জন্য রবারের টায়ারে অথবা ছোট ছোট নৌক নিয়ে সমুদ্রের বুকে ভেসে বেড়াল। এখানে এসে জানতে পারলাম এখানে কহো না প্যায়র হ্যায় এবং আরও অনেক সিনেমার শুটিং করা হয়েছে। আমরাও অনেক ছবি তুললাম। এর পর থেকে আমরা মাংকি বিচ থেকে ছোট একটি লঞ্চে করে ফিফিদান নামে আরেকটি বিচে এলাম। এই বিচ টিও অপূর্ব সুন্দর। সমুদ্রের জলের রঙ কোথাও ব্লু, সিগ্রীন, ডিপ ব্লু, বটল গ্রীন একেক জায়গায় একেক রকম। এখানে বিচের গায়েই একটি রিসর্টে আমরা লাঞ্চ সারলাম। Delicious Lunch along with different fruit and fruit juice. লাঞ্চ সেরে আমরা ক্রুজে ফিরে হোটেলে ফেরার উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। সারাদিন এইসব অপূর্ব দশ্য দেখার পর ফেরার সময় মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে গেল। এখানেও থাই ফটোগ্রাফাররা আমাদের চীনা মাটির প্লেটে ল্যামিনেট করা ফটো দিয়েছিল ৪০০ বাথের (বাথ হলো থাই মুদ্রার নাম) বদলে।

পরের দিন আমরা ফুকেতের সাইট সিইংয়ে বেরলাম including Tiger Safari. এইটা ট্যুরটা একটু কস্টলি। শুরুতেই বলেছিলাম যে থাইল্যান্ডের টাকাকে বলে বাথ- যার ভ্যালু বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রায় আড়াই গুণ। প্রথমেই আমরা গেলাম টাইগার সাফারী মানে বাঘেদের সাথে খেলতে, মোলাকাত করতে! পৃথিবীতে হয়তো হাতে গোনা দু-একটা দেশেই এইভাবে সরাসরি বাঘেদের ছুঁতে দেয় বা খেলতে দেয়। সেখানে স্বর্গীয়, মনোরম, খুব ভাললাগার এক অভিজ্ঞতা অর্জন করলাম। মোট তিনটি বেবি টাইগার এর খাঁচায় আমি ও ট্রেনার গেলাম। আমরা হাত ধুয়ে আলাদা জুতো পরে সেখানে গেলাম। তিনটি বেবি টাইগারকে কোলে নিলাম, আদর করলাম। আর ওরা আমাদের কোলে শুয়ে পড়ল। কি নরম, কি সুন্দর, কি আদুরে- অথচ এরাই পরবর্তীকালে ওরকম ভয়ঙ্কর, সুন্দর বাঘমশাইতে পরিণত হয়। প্রায় আধ ঘন্টা আমরা ওদের সাথে কাটালাম। এখানে বিদেশীরা, ট্রেনার প্রচুর ছবি তুলল। ওই দেশের মতো ওরাও খুব Disciplined. আর একটা অদ্ভূত জিনিস ওদের কোনও ঘুমের ওষুধ দেওয়া হয়া না।
সেখান থেকে আমরা গেলাম হনি-বি সেক্টর তে। সেখানে ন্যাচরাল মৌচাক দেখলাম, হাতেও নিলাম। রোহিত আর আমি প্রচুর মৌমাছি সমেত একটা wooden stand হাতে নিলাম। সেও এক অপূর্ব অভিজ্ঞতা। কি করে মধু তৈরী হচ্ছে তা দেখলাম, খুব ভাল লাগল। আমরা সেখান থেকে মধু, চকলেট এইসব কিনলাম। সেখান থেকে আমরা গেলাম জুয়েলারী সপে। বিশাল জুয়েলারী মল আর খুবই দামী। আমরা কিছু কিনিনি। তবে অপূর্ব রত্নরাজির সম্ভার, চোখ টানবেই। খুবই আকর্ষনীয়। তারপর আমরা ক্যাসুনাট সেক্টরে গেলাম। কি করে কাজু তৈরী হচ্ছে। মহিলারা কি সুন্দর ভাবে মেশিনে গাছের খোসা সমেত কাজুর ফল থেকে কাজু বের করে নিচ্ছে তাও দেখলাম। এখানে বিভিন্ন স্বাদের কাজু পাওয়া যায় যেমন- সল্টি, জিনজার, বাটার, হনি, চকোলেট এইসব। সেখান থেকে গেলাম বেবি এলিফ্যান্ট নিয়ে খেলতে। বেবি এলিফ্যান্ট কে আমরা কলার টুকরো দিলাম। সেই কলার ঝুড়িটিও ১০০ বাথ দিয়ে কিনতে হল। বেবি হাতি আমাদের তার শুঁড় দিয়ে জড়িয়ে ধরল। আমরাও তার গায়ে হাত দিয়ে তাকে অনেক আদর করলাম। (চলবে…………)

Related Posts