ছোটগল্প

নুরজাহান খাতুনের অণুগল্প- বাড়ি

বাড়ি
নুরজাহান খাতুন


রিমির পক্ষে আর এ বাড়িতে বেশিদিন থাকা সম্ভব হবে না। এভাবে আর কতদিন থাকা যায় ! আর পারছে না। দিনের পর দিন আবীরের খারাপ ব্যবহার সহ্য করে আসছে।আর ভালো লাগছে না । সেদিন স্বচক্ষে দেখেছে। আবীর যে অন্য নারীতে আসক্ত সে সন্দেহ রিমির অনেকদিন থেকেই ছিল। কিন্তু রিমি অন্যের কথায় কান দেয়নি। কিন্তু সেদিন নিজের চোখকেও বিশ্বাস করতে পারে নি। রিমি বিবাহিত জীবনটাকে কোনোরকমে নিজে প্রানপণ চেষ্টা করে আগলে রাখতে চাইছিল। কিন্তু আর এবারে পারছে না। সে কিছুটা বাধ্যও ছিল।সে কোথায় যাবে ? তার যাওয়ার ‌মতো তো আর কোনো জায়গায় নেই। মা-বাবা মারা গেছে। দাদা আর বৌদির সংসার। বিয়ের আগেই সে বৌদির চক্ষুশূল ছিল। সত্যি কথা বলতে বিয়ের পরে স্বামীর ঘরকে আপন ভেবেছিল। আবীরের মা-বাবাকে নিজের মা-বাবার মতোই শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা দিয়েছে । তারাও রিমিকে খুব ভালোবাসেন।আবীরের চেয়ে রিমি তাদের অনেক কাছের মানুষ। রিমির সাথে আবীরের বিবাদ বাঁধে। রিমির অসহ্য হয়ে যায়। রিমি চিৎকার করে বলে , তুমি যেকোনো একজনকে বেছে নাও । হয় তুমি আমার সাথে থাকবে না হয় তোমার অফিসের কলিগের সাথে । আবীর বলে ,আমি আমার মতো থাকবো। তোমার ভালো না লাগলে যেতে পারো ।রিমি কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।রিমি বলে ,বাবা , আমি আর এ বাড়িতে কি করে থাকবো ? আবীরের জীবনে আমার কোনো প্রয়োজন নেই। আমি আর কোন অধিকারে থাকবো। সত্যি বলতে বাবা , আমি এখানে আর থাকতে পারছি না। কিন্তু বাবা , আমার তো আর কোনো বাড়িও নেই । আসলে আমাদের মানে মেয়েদের নিজেদের একটা বাড়ি থাকা খুবই দরকার ।আমি আজ এটা বেশ ভালোভাবে উপলব্ধি করতে পারছি। মেয়েদের সত্যিই কোনো বাড়ি থাকে না !নেই !তাই না ,বাবা ! আমরা সব সময় অপরের আশ্রিতা ।তাই ,না ! আবীরের বাবা বলেন ,মা , আমি আমার ছেলের এই নিন্দনীয় কাজের জন্য অতিশয় লজ্জিত ! তোমার কাছে ক্ষমা চাওয়ার কোনো শব্দ নেই ।তবে তুমি এ বাড়িতেই থাকবে । আমার মেয়ে হয়ে । তুমি তো আমার মেয়ে । আমাদের কোনো মেয়ে নেই। তাই আমরা দুঃখ করতাম। তোমাকে পেয়ে আমাদের মেয়ের অভাব পূরণ হয়ে গেল। তুমি কোত্থাও যাবে না ।রিমি কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। শাশুড়ি রিমিকে জড়িয়ে ধরেন ।

রচনাকাল -৩১/১/১৮
রচনাস্থান -রঘুনাথপুর , পুরুলিয়া ।

Related Posts