প্রবন্ধ

সৈয়দ হোসেনের প্রবন্ধ- প্রেম ও ভালোবাসা

প্রেম ও ভালোবাসা
সৈয়দ হোসেন


আমরা প্রেম ভালবাসা নিয়ে কতইনা গল্প কবিতা লিখি, প্রেম ও ভালবাসায় ব্যাকুল হয়ে উঠি কিন্তু কখনো কি শব্দ দুটির গভীরতা ভেবে দেখেছি? আসুন একটু মিলিয়ে দেখি। প্রেমের আবিধানিক অর্থ ভালবাসা, প্রীতি, স্নেহ ও ভক্তি; ভালবাসা হলো স্নেহ, প্রীতি, প্রণয়, আসক্তি। মনোবিজ্ঞানী চার্লস লিন্ডহোমের সংজ্ঞানুযায়ী প্রেম হল “একটি প্রবল আকর্ষণ যা কোন যৌন-আবেদনময় দৃষ্টিকোণ হতে কাওকে শ্রেষ্ঠ হিসেবে তুলে ধরে, এবং যাতে তা ভবিষ্যতে দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার মনোবাসনাও অন্তর্ভুক্ত থাকে।” চলমান ভাবধারায় প্রেম ও ভালবাসা সমার্থক শব্দ, একে অপরের পরিপূরক। আপাতদৃষ্টে সামান্য পার্থক্য মনে হলেও শব্দ দুটির মাত্রিক অর্থ বহু বহু যোজন দূরে।

প্রেমের পূর্ব শর্ত হলো ভাল লাগা, বিপরীত লিঙ্গ ব্যতীত প্রেম হয় না। ধরে নিতে পারি ভাল লাগা থেকে প্রেমের জন্ম। ইহা যৌন আকর্ষণের সাথে সম্পর্কিত কোন আবেগীয় আকর্ষণ। স্বামী স্ত্রীরর মধ্যে প্রেম নয় ভালবাসা হয়। লিঙ্গভেদে নারী পুরুষ সহকর্মীদের ভালোবাসি, প্রেম করি না। দেশপ্রেম শব্দটি দেশকে ভালোবাসা বুঝায় অথচ দেশকে ভালবাসি, দেশের সাথে প্রেম করি না। পক্ষান্তরে দেশের প্রতি আনুগত্য, দেশের মঙ্গল চিন্তা, দেশের আইনকে শ্রদ্ধা করা ইত্যাদির সামগ্রিক বহিঃপ্রকাশই দেশপ্রেম। ঈশ্বরের কোন লিঙ্গান্তর হয় না তাই একমাত্র ঈশ্বর বা সৃষ্টিকর্তার ক্ষেত্রেই প্রেম ও ভালবাসা সমাহারে প্রযোজ্য। প্রেমে প্রতিহিংসা ওঁৎপেতে থাকে, স্বার্থের ব্যত্যয় হলে ধ্বংস এগিয়ে আসে। প্রেমে ভালোবাসার আবেগটুকু সম্পৃক্ত হলেও প্রেম দেহকেন্দ্রীক হওয়ার ফলে প্রকৃত ভালবাসাকে হত্যা করে।

প্রেম বলতে দুটি মানব মানবীর শারীরিক জৈবিক চাহিদা কিংবা আকাঙ্ক্ষা পূরণের কামনা নিরবে জড়িত। এ প্রেমকে আমরা আসক্তি বলতে পারি। এ আসক্তি যত এগিয়ে আসে তত জনশ্রুত হতে থাকে; হতে বাধ্য কেননা এতে কোন ভালবাসা নেই। প্রেম শুধুই বিপরীত লিঙ্গের প্রতি দুইটি অদ্ভুত মনের কামাতুর আকর্ষণ। এ প্রেম সমাজ জানবেই, তুমি ঘৃণিত হবেই, যেহেতু দৈহিক শুভ্রতার রক্ষক একমাত্র সৃষ্টিকর্তা। কোন জাতি-ধর্ম-বর্ণ অবাধ দৈহিক কামনা পূরণে সমর্থন করেনা সুতরাং বলা যায় ইহা অন্যায় অথচ ইহাই করা হয়। ফলশ্রুতিতে নিজে নিগ্রহ এবং সমাজ পঙ্কিলতায় ভোগে।

সৃষ্টির নাড়ি মূলে রয়েছে ভালবাসা। ভালোবাসা মানে মনের তীব্র আবেগকেন্দ্রিক অনুভূতি, ভালবাসা ব্যতীত পৃথিবী নিঃসাড়। ভালবাসা কলুষ মুক্ত এক মোহনিয় অবেগ যা সৃষ্টিকর্তা হতে নিসৃত বিস্তৃত অশরীরী এক মায়াবী আকর্ষণ, আছে হৃদয়ের টান। ভালোবাসা স্নেহ ও ভক্তির শক্তিশালী বহিঃপ্রকাশ। ভালোবাসা বিভিন্ন রকম হতে পারে, যেমন: নিষ্কাম ভালোবাসা, ধর্মীয় ভালোবাসা, আত্মীয়দের প্রতি ভালোবাসা, ভালবাসায় আছে মমতার বন্দন, শৃঙ্খলিত জীবন। ভালবাসা সার্বজনীন সর্বজীবে অবারিত এবং কোন পঙ্কিলতা নেই, স্পর্শ করেনা অস্পৃশ্য। খুশিখুশি একটা মনোরম পরিবেশ থাকে। ভালোবাসায় মানুষ জীবন দিতেও প্রস্তুত।

ভালবাসা মানুষকে মহান করে আর প্রেমে, জান লইয়া দে দৌড়।

Related Posts