প্রবন্ধ

হোসনেয়ারা আফরিনের প্রবন্ধ- স্বাধীনতা ও বাংলাদেশ

স্বাধীনতা ও বাংলাদেশ
হোসনেয়ারা আফরিন


বাংলাদেশের পটভূমি সম্পর্কে আমরা সবাই অবগত।
১৯৪৭-৭১সময়কালের প্রায় প্রতি বছরই ছিল পাকিস্তানি শাসনের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ।১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন পাকিস্তান আমলের প্রথম বড় ঘটনা।
বিভিন্ন অার্থ-সামাজিক বঞ্চনার ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশের ফলে ১৯৬৯ সালে তা গণবিদ্রোহের পরিণত হয়।১৯৭০সালের নির্বাচনে আওয়ামী-লীগ সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করেও ক্ষমতা না পেলে শুরু হয় শান্তিপূর্ণ অসহযোগ অান্দোলন। ১৯৭২ সালের ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণে বাংলার নিরীহ মানুষের রক্ত তপ্ত হয়ে ওঠে। শুরু হয় আন্দোলন প্রতিবাদ।

১৯৭১সালের ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি সামরিক জান্তা জনজীবনে নারকীয় বিভীষিকা সৃষ্টি করে ।অগ্নিসংযোগ, হত্যাকান্ড, লুন্ঠন, নির্যাতনে ছারখার হয় বাংলার গ্রাম। লক্ষ লক্ষ মানুষের উদ্বাস্তু জীবন, মৃত্যুর অার্তনাদ, নির্যাতনের যন্ত্রণা স্বত্বেও বাঙালিকে দমাতে পারেনি তারা। পারেনি তার স্বত্তাকে বিভক্ত করতে। ধ্বংসের মৃত্যু আর্তনাদের ভেতর দিয়ে ১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বর জন্ম হয় গৌরব উজ্জ্বল অনন্ত অক্ষয়মূর্তি বাংলাদেশের।

আর এর প্রতিটি ধাপে যিনি জড়িত ছিলেন ক্রমান্বয়ে তিনি রাষ্ট্র গঠনের নায়ক হয়ে ওঠেন। তিনি হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। যা ছিল আমাদের পূর্বপুরুষদের স্বপ্ন বঙ্গবন্ধুর হাতে তা প্রোজ্জ্বল বাস্তব হয়। তাই তো বর্ষীয়ান সাংবাদিক ওবায়েদ উল হক চমৎকার ভাবে বলেন,’For centuries it existed an idea and ideal in the unfulfilled dream of the ancient heroes of Bengal who carried it to their graves. Bangabandhu ,who inherited this legacy reared and nourished the dream into a strong and abiding passion and gave the passion a shape ,that is the map of Bangladesh.’

কিন্তু ১৯৭১সালের জেনারেশন যে উদ্দেশ্যে যুদ্ধ করে তা কি আদৌ পূরণ হয়েছে। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর আমরা বিভিন্ন রকম সরকারের শাসন দেখি। সামরিক, আধা-সামরিক, গণতন্ত্র। কিন্তু ফলাফল একই। বিভিন্ন সরকারের আমলে প্রশাসনে ব্যাপক রাজনৈতিক প্রভাব লক্ষনীয়। সেই ঔপনিবেশিক আমলের প্রশাসনিক কাঠামোরই উত্তরাধিকার, যেখানে জবাবদিহিতার প্রক্রিয়া অনুপস্থিত। রাজনৈতিক প্রক্রিয়া দুর্নীতি গ্রস্থ এবং জনপ্রশাসনে এর যথেষ্ট প্রভাব থাকার কারণে আমলাতান্ত্রিক দুর্নীতি স্বাভাবিক ভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে।যার ফলে সৃষ্টি হচ্ছে নৈরাজ্য, চাঁদাবাজি, ঘুষ, গুম, খাদ্যে ভেজাল, সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি। সব মিলিয়ে অসুস্থ সমাজ ও রাষ্ট্র।ক্যান্সারের মত ছড়িয়ে আছে সর্বত্র।

মিডিয়াকে বলা হয় সমাজের ওয়াচডগ, মিরর অব দ্য সোসাইটি। কিন্তু দুঃখের বিষয় তারা ও আজ স্বাধীন নয়।
জাতীয় সংসদ, বিচার ব্যবস্তা, জনপ্রশাসন, সুশীল সমাজ ইত্যাদির অন্যতম প্রধান ভূমিকা হচ্ছে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে কাজ করা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সচ্ছতা জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার মত পরিবেশ গড়া। কিন্তুু স্বাধীনতার এত বছরেও তারা নিরপেক্ষ সচ্ছ হতে পারেনি। যার ফলে আজও জাতি নিরাপত্তাহীনতায় বোধ করছে। অন্যদিকে ক্ষমতাবান শ্রেণীর মানুষেরা সম্পদের পাহাড় গড়ছে। আরেক দল ফুটপাতে দিন কাটাচ্ছে।

এই কি আমার লাখো শহীদ ভাইয়ের রক্তে অর্জন করা স্বাধীনতার ফল! আমার সোনার বাংলায় দূরারোগ্য দূর্নীতি নিরবে সয়ে যাব? না, যদি আমরা সবাই সত্যিকারে আমাদের দেশকে ভালবাসি, দেশের মানুষকে ভালবাসি, তাহলে আসুন আমরা সবাই এই বিজয়ের মাসে শপৎ করি যে যেখানে দুর্নীতি দেখব, অন্যায় দেখব, অবিচার দেখব সাথে সাথে প্রতিবাদ করব। সত্যের বিজয় অবশ্যই আসবে। মালেশিয়ার মাহাতি মোহম্মদ পারলে আমরাও পারব। আমরা সবাই মিলে সোনার বাংলাকে দুর্বার গতিতে এগিয়ে নেব ।

 

Related Posts